দারিদ্র নাকি লোভ? ত্রাণের আশায় বাংলাদেশিরাও রোহিঙ্গা!


  বাংলাদেশে আশ্রিত ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক’ বা রোহিঙ্গারা যাতে এ দেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে না যায়, এ দেশের নাগরিকত্ব, জাতীয় পরিচয়পত্র লাভ করতে না পারে, তার জন্য নানা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার পরও অভিযোগ রয়েছে, অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয় অসাধু জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এবং অর্থের বিনিময়ে চোরাপথে বাংলাদেশি পরিচয় পেতে তৎপর। বাংলাদেশি পরিচয়টিই তাদের কাছে লোভনীয়। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এর বিপরীত ঘটনাও ঘটেছে।কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কাছে নিজ দেশের নাগরিকত্বের চেয়ে ত্রাণসামগ্রী পাওয়ার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে। ত্রাণের লোভে তারা রোহিঙ্গাদের নাম তালিকাভুক্তির লাইনে দাঁড়িয়ে ছবিসহ আঙুলের ছাপ দিয়ে রোহিঙ্গা সেজে বসেছে। এই অবস্থায় নিজ দেশের যাবতীয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পুলিশে সোপর্দ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।বর্তমানে তাদের উপলব্ধি তারা ভুল করেছে। ভুল সংশোধনের জন্য তাদের অনেকেই এখন জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন অফিসে ধরনা দিচ্ছে।কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশি হয়েও ত্রাণের লোভে রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হয়েছে এমন ১০০ জনের তথ্য আমাদের হাতে আসে। ভুল সংশোধন করতে যারা আবেদন করেছে তাদের তথ্য।


এর বাইরেও অনেকে থাকতে পারে।’
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন রাজধানীর নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা যাতে অন্তর্ভুক্ত না হতে পারে, তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অনেক বাংলাদেশিই রিলিফ পাওয়ার আশায় স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে এটা জানা যাচ্ছে। রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে যারা সেখানে আঙুলের ছাপ দিয়েছে, তারা এ দেশে ভোটার হতে পারে না।ভোটার হয়ে থাকলেও বাদ পড়ে যায়। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এখন রিলিফ কমে যাওয়ার জন্য ওই সব ব্যক্তি নিজে থেকেই ভুল সংশোধনের আবেদন করছে। সেখানে এমন পরিবারও রয়েছে, স্বামী বাংলাদেশি কিন্তু স্ত্রী রোহিঙ্গা। সেখানে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’ভুক্তভোগীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের সময় রোহিঙ্গা হিসেবে নাম তালিকাভুক্ত করে বিপাকে পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দারাই এমন ফাঁদে পা দিয়ে এখন পরিত্রাণ পেতে ছুটছে প্রশাসন ও নির্বাচন অফিসের দ্বারে দ্বারে। তারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ঢলের সময় উখিয়া ও টেকনাফে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেশি-বিদেশি ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা ছিল। এ সময় ত্রাণের লোভে পড়ে অনেক বাংলাদেশি স্থানীয় বাসিন্দা ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে।

পরে বিভিন্ন সময় তারা পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। কেউ কেউ পাসপোর্ট অফিসে আঙুলের ছাপ দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে আটক হয়।

টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শীলখালী গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলম (৫০) গত ১৬ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে নিজের পরিবারের চার সদস্যের নাম রোহিঙ্গা তালিকা থেকে বাদ দিতে আবেদন করেন।
Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post